মহান আল্লাহর আরশ ও কুরসি সম্পর্কে ১০ তথ্য, আরশের ফেরেশতা, সৃষ্টির বিশালতা


আল্লাহর আরশ Allah Arasআরশ মহান আল্লাহর বৃহত্তম সৃষ্টি। এর ওপর রাব্বুল আলামিন তাঁর মর্যাদা ও অবস্থান অনুযায়ী সমাসীন। ইরশাদ হয়েছে, ‘মহিমান্বিত আল্লাহ, যিনি প্রকৃত মালিক, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি সম্মানিত আরশের অধিপতি। (সুরা মুমিনুন-১১৬) আরশ কুরসি সম্পর্কে দশটি তথ্য জানবো আজ।

আববাস বিন আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্ল­াম একবার তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ

‘‘তোমরা কি জানো, আসমান ও যমীনের মধ্যকার দূরত্ব কত?’’ আমরা বললামঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সবচেয়ে অধিক জানেন। তিনি বললেন, ‘‘আসমান ও যমীনের মাঝে দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ বছরের পথ। এক আকাশ থেকে অন্য আকাশের দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ’ বছরের পথ। প্রত্যেক আকাশের ঘনত্বও (পুরুত্ব) পাঁচশ’ বছরের পথ। সপ্তমাকাশ ও আরশের মধ্যখানে রয়েছে একটি সাগর। যার উপরিভাগ ও তলদেশের মাঝে দূরত্ব হচ্ছে আকাশ ও যমীনের মধ্যকার দূরত্বের সমান। আল্লাহ তাআলা এর উপরে রয়েছেন। আদম সন্তানের কোন কর্মকান্ডই তাঁর অজানা নয়’’। ইমাম আবু দাউদ (রঃ) এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন।

মহান আল্লাহর আরশ ও কুরসি সম্পর্কে ১০ তথ্য

১। আল্লাহর সৃষ্টির অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে আরশ৷ আরশ অর্থ হচ্ছে রাজত্ব, রাজ সিংহাসন,ছাদ,মাচা শক্তি,গোত্র ইত্যাদি৷
(মুজামুল ওয়াহী,লিসানুল আরব)

২। কুরআন মাজিদে আরশ শব্দটি পঁচিশ বার এসেছে৷ এ পৃথিবী থেকে সাত আসমান পার হয়ে সিদরাতুল মুনতাহা থেকে সত্তর হাজার নুরের স্তর অতিক্রম করে আল্লাহর আরশ৷

৩। এ আরশ এতই মর্যাদাবান যে আল্লাহ ইরশাদ করেন, তিনি মহান আরশের রব৷ (সুরা তওবা,১২৯)

৪। প্রিয়নবি সা বলেন, আরশ বহনকারী একজন ফেরেশতার সাথে আমাকে আলাপ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ সে ফেরেশতার কানের লতি থেকে ঘাড় পর্যন্ত যে দূরত্ব তা কোনো দ্রুতগামী ঘোড়া অতিক্রম করতে সাতশত বছর সময় লাগবে৷ (কাশফুল আসর,৩/৩৬২)

৫। আরশ বহনকারী একজন ফেরেশতা যদি এত বড় হন, তাহলে আরশ কত বড়৷ ইমাম জাফর সাদেক রহ. বলেন, আরশ প্রতিদিন সত্তর হাজার নুরের রং ধারণ করে৷

৬। কুরসি আল্লাহর সৃষ্টির এক অনন্য নিদর্শন৷ কুরসি অর্থ চেয়ার বা আসন, সিংহাসন কুরসি আল্লাহর আরশে আযিমের উপর অবস্থিত৷

৭। আল্লাহর কুরসি যে কতবড় তা তিনি নিজেই বর্ণনা দিয়েছেন- তাঁর কুরসি আকাশ ও পৃথিবীময় পরিব্যাপ্ত; এদের রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত করে না৷ (সুরা বাকারা,২৫৫)

৮। কুরসি শব্দটি কুরানে ২ বার এসেছে৷ উক্ত আয়াতে বোঝা যায় যে, সাত আসমান সাত যমিন কুরসিতে জায়গা হয়৷ হযরত হাসান বসরী রহ বলেন, আরশ থেকে কুরসি অনেক উপরে৷ আরশের উপরে আলো, অন্ধকার, পানি ও বরফের চারটি পর্দা রয়েছে৷ এক একটি পর্দার থেকে অপর পর্দা পাঁচশত বছরের পথ৷ কুরসির তুলনায় সাত আসমান সাত জমিন বিশাল মরুভুমিতে একটি সর্ষে দানার মত৷ আবার আরশের তুলনায় কুরসি একটি সর্ষে দানার মত৷ আরশ বহনকারী ফেরেশতা আট জন৷ আর কুরসি বহনকারী ফেরেশতা চার জন৷ (কাসফুল আসরার-৩/৬৯৪, ৮/৪৫৩)

৯। আল্লাহর আরশ, কুরসি ও লাওহে কলম সবই তাঁর কুদরতের নিশানা৷ যে বিস্ময়কর কুদরতসমূহ আমাদের প্রিয়নবি সা. মিরাজ সফরে সশরীরে জাগ্রত অবস্তায় বাস্তবেই দেখেছেন৷

১০। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা সাত ব্যক্তিকে সেই দিনে তাঁর (আরশের) ছায়া দান করবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না, (তারা হল,) ন্যায় পরায়ণ বাদশাহ (রাষ্ট্রনেতা), সেই যুবক যার যৌবন আল্লাহ তাআলার ইবাদতে অতিবাহিত হয়, সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদসমূহের সাথে লটকে থাকে (মসজিদের প্রতি তার মন সদা আকৃষ্ট থাকে।)

সেই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব ও ভালবাসা স্থাপন করে; যারা এই ভালবাসার উপর মিলিত হয় এবং এই ভালবাসার উপরেই চিরবিচ্ছিন্ন (তাদের মৃত্যু) হয়। সেই ব্যক্তি যাকে কোন কুলকামিনী সুন্দরী (ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে) আহবান করে, কিন্তু সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি।’

সেই ব্যক্তি যে দান করে গোপন করে; এমনকি তার ডান হাত যা প্রদান করে, তা তার বাম হাত পর্যন্তও জানতে পারে না। আর সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে; ফলে তার উভয় চোখে পানি বয়ে যায়।

(বুখারি ৬৬০, ১৪২৩, ৬৪৭৯, ৬৮০৬, মুসলিম ১০৩১, তিরমিযি ২৩৯১, নাসায়ি ৫৩৮০, আহমদ ৯৩৭৩, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৭৭)

সুতরাং আয়াতুল কুরসীর মধ্যে যেহেতু আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব ও মর্যাদার এতগুলো গুণ বিদ্যমান, তাই এটি কুরআনের সর্বাধিক মর্যাদাবান আয়াত হওয়ার দাবী রাখে এবং এটি তার পাঠকারীকে সকল প্রকার অকল্যাণ ও শয়তান থেকে হেফাজতকারী হিসাবে পরিগণিত হওয়ারও হকদার।

আয়াতুল কুরসী থেকে এই দলীল পাওয়া গেল, আল্লাহ তাআলা নিজেকে যেসব গুণে গুণান্বিত করেছেন এবং নিজেকে যেসব নামে নামকরণ করেছেন, সে ক্ষেত্রে তিনি আয়াতুল কুরসীতে শির্কের নেতিবাচক বক্তব্য এবং তাওহীদের ইতিবাচক বক্তব্য একত্রিত করেছেন। আয়াতুল কুরসী আল্লাহর জন্য একদিকে যেমন সুমহান, সর্বোচ্চ ও পরিপূর্ণ গুণাবলী সাব্যস্ত করেছে, অন্যদিকে তাঁর পবিত্র সত্তা হতে সকল দোষ-ত্রুটি এবং অশোভনীয় বৈশিষ্টগুলোকে দূর করে দিয়েছে।

(বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয় জানতে ভিজিট করুন www.prosno.xyz | সাথেই থাকুন www.IslamBangla.Com ভিজিট করতে থাকুন)

আল্লাহর আরসের বেষ্টনকারী কারা? কোরআনে তাদের সম্পর্কে যা ইরশাদ হয়েছেঃ

এতদপ্রসঙ্গে আল-কোরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘আর তুমি ফিরিশতাদেরকে দেখতে পাবে যে, তারা আরশের চতুস্পার্শ্ব ঘিরে তাদের প্রতিপালকের প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছে।

আপনি ফেরেশতাগণকে দেখবেন, তারা আরশের চার পাশ ঘিরে তাদের পালনকর্তার পবিত্রতা ঘোষনা করছে। তাদের সবার মাঝে ন্যায় বিচার করা হবে। বলা হবে, সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর। (সুরা যুমার আয়াত: ৭৫)

অপর এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে: ‘সেদিন মহা প্রলয় সঙ্ঘঠিত হবে এবং আকাশ বিদীর্ণ হয়ে বিশ্লিষ্ট হয়ে পড়বে। ফিরিশতাগণ আকাশের প্রান্তদেশে থাকবে

এবং সেদিন আটজন ফিরিশতা তাদের প্রতিপালকের আরশকে তাদের ঊর্ধে ধারণ করবে।

وَالْمَلَكُ عَلَى أَرْجَائِهَا وَيَحْمِلُ عَرْشَ رَبِّكَ فَوْقَهُمْ يَوْمَئِذٍ ثَمَانِيَةٌ

এবং ফেরেশতাগণ আকাশের প্রান্তদেশে থাকবে ও আট জন ফেরেশতা আপনার পালনকর্তার আরশকে তাদের উর্ধ্বে বহন করবে। (সুরা হাক্বকাহ আয়াত: ১৭)

আর এরাই হল সে সমস্ত ফিরিশতাগণ যারা মুমিন মোক্তাকী বান্দাহদের জন্য আল্লাহর নিকট মাগফেরাত কামনা করে এবং দোয়া করে। যার বিবরণ কোরআনে এভাবে রয়েছে:

اَلَّذِیۡنَ یَحۡمِلُوۡنَ الۡعَرۡشَ وَ مَنۡ حَوۡلَہٗ یُسَبِّحُوۡنَ بِحَمۡدِ رَبِّہِمۡ وَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِہٖ

وَ یَسۡتَغۡفِرُوۡنَ لِلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا ۚ رَبَّنَا وَسِعۡتَ کُلَّ شَیۡءٍ رَّحۡمَۃً وَّ عِلۡمًا

فَاغۡفِرۡ لِلَّذِیۡنَ تَابُوۡا وَ اتَّبَعُوۡا سَبِیۡلَکَ

وَ قِہِمۡ عَذَابَ الۡجَحِیۡمِ

যারা আরশকে ধারণ করে এবং যারা এর চারপাশে রয়েছে, তারা তাদের রবের প্রশংসাসহ তাসবীহ পাঠ করে এবং তাঁর প্রতি ঈমান রাখে।

আর মুমিনদের জন্য ক্ষমা চেয়ে বলে যে, ‘হে আমাদের রব, আপনি রহমত ও জ্ঞান দ্বারা সব কিছুকে পরিব্যপ্ত করে রয়েছেন।

অতএব যারা তাওবা করে এবং আপনার পথ অনুসরণ করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন।

আর জাহান্নামের আযাব থেকে আপনি তাদেরকে রক্ষা করুন। (সূরা মুমিন: আয়াত: ৭)

আরশ কুরসীসহ আল্লাহর আরো কতিপয় বিশাল বিশাল সৃষ্টি সম্পর্কে সংযুক্তিঃ

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,

‘‘দুনিয়ার আকাশ এবং এর পরবর্তী আকাশের মধ্যে দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ’ বছরের পথ। আর এক আকাশ থেকে অন্য আকাশের দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ বছরের পথ। এমনি সপ্তমাকাশ এবং কুরসীর মধ্যে দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ বছরের পথ। কুরসী এবং পানির মাঝখানে দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ বছরের পথ। আরশ হচ্ছে পানির উপরে। আর আল্লাহ তাআলা আরশের উপরে। তোমাদের আমলের কোন কিছুই তাঁর কাছে গোপন নয়’’।

হাম্মাদ বিন সালামা হতে এই হাদীছ ইবনে মাহদী বর্ণনা করেন আসেম হতে, আসেম বর্ণনা করেন যির্ হতে, তিনি বর্ণনা করেন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে। অনুরূপ বর্ণনা করেন মাসউদী আসেম হতে, তিনি আবি ওয়ায়েল হতে এবং তিনি আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন।

ইমাম যাহাবী (রঃ) উপরোক্ত সনদ বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেনঃ অনেক সনদে এই বর্ণনা এসেছে।

আববাস বিন আব্দুল মুত্তালিবের হাদীছটি লেখক এখানে সংক্ষিপ্ত করে উল্লেখ করেছেন। আবু দাউদের বর্ণনাটি ঠিক এ রকম, আববাস বিন আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ) বলেন,

‘‘আমি একদা একদল সাহাবীর সাথে খোলা ময়দানে বসা ছিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও সেখানে ছিলেন। তখন তাদের উপর দিয়ে এক খন্ড মেঘ অতিক্রম করার সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেদিকে তাকিয়ে বললেনঃ তোমরা এটিকে কী বলো? তারা বললোঃ السحاب ‘‘এটিকে আমরা মেঘ বলি’’।

তিনি তখন বললেনঃ والمزن (আলমুয্ন)। সাহাবীরা বললোঃ আমরা এটিকে মুয্নও বলি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ والعنان (আলআনান)। সাহাবীগণ বললোঃ আমরা আনানও বলি। ইমাম আবু দাউদ (রঃ) বলেনঃ আমি আনান শব্দটি ভালভাবে বুঝতে পারিনি।

অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি জানো আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানের দূরত্ব কতটুকু? সাহাবীগণ বললোঃ আমরা জানিনা।

তিনি বললেনঃ উভয়ের মধ্যে রয়েছে হয় একাত্তর বছরের, না হয় বাহাত্তর বছরের না হয় তেহাত্তর বছরের দূরত্ব। এমনি প্রত্যেক আকাশ ও তার পরবর্তী আকাশের মধ্যবর্তী দূরত্ব হচ্ছে একই রকম। এভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাতটি আসমান গণনা করলেন। সপ্তম আকাশের উপর রয়েছে একটি সাগর। সাগরের উপর হতে নীচের দূরত্ব (গভীরতা) হচ্ছে এক আসমান থেকে অন্য আসমানের মধ্যকার দূরত্বের সমান।

সাগরের উপরে রয়েছে আটটি ওয়াল (বিশাল আকারের আট ফেরেশতা)। তাদের হাঁটু থেকে পায়ের খুর পর্যন্ত দূরত্ব এক আসমান থেকে অন্য আসমানের মধ্যবর্তী দূরত্বের সমান। তাদের পিঠে রয়েছে আল্লাহর আরশ। আরশ এত বিশাল যে, তার নীচের অংশ হতে উপরের ছাদ পর্যন্ত দূরত্ব হচ্ছে এক আসমান থেকে অন্য আসমানের মধ্যবর্তী দূরত্বের সমান। আর আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আরশের উপরে’’।

وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا আর আসমান ও যমীনকে ধারণ করা তাঁর জন্য মোটেই কঠিন নয়ঃ আসমান-যমীনসহ উর্ধ্বজগৎ ও নিম্নজগতের সবকিছু সংরক্ষণ করা আল্লাহর জন্য মোটেই কঠিন ও ভারী অনুভব হয়না। কেননা তাঁর শক্তি ও ক্ষমতা সর্বোচ্চ ও চূড়ান্ত।

وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ আর তিনি সর্বোচ্চ ও মহান সত্তাঃ অর্থাৎ সকল দিক থেকেই আল্লাহ তাআলার জন্য সৃষ্টির উপরে হওয়া সুপ্রমাণিত ও সুসাব্যস্ত। আল্লাহর যাত সুউচ্চ। অর্থাৎ তিনি সকল সৃষ্টির উপরে। তিনি আরশেরও উপরে। আল্লাহর মর্যাদা ও বড়ত্ব সর্বোচ্চ। সুতরাং তাঁর জন্য রয়েছে পরিপূর্ণ সিফাতসমূহ এবং সুমহান গুণাবলী। আল্লাহ তাআলার শক্তি এবং ক্ষমতাও সর্বোচ্চ। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান, সকল সৃষ্টির পরিচালক এবং কোন কিছুই তাঁর জন্য অসম্ভব নয়।

الْعَظِيمُ (সুমহান) হচ্ছেন এমন সত্তা, যার মধ্যে বড়ত্বের সকল সিফাতই বিদ্যমান। সুতরাং নবী, ফেরেশতা এবং মুমিন বান্দাদের অন্তরে রয়েছে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ সম্মান।

অতঃপর শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেনঃ আয়াতুল কুরসীতে আল্লাহর বড় বড় সিফাতের আলোচনা হয়েছে বলেই যে ব্যক্তি রাতে ইহা পাঠ করবে, সারা রাত আল্লাহর পক্ষ হতে তার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত তাঁর নিকট শয়তান আসতেই পারবেনাঃ এই বক্তব্যের দ্বারা শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) ঐ হাদীছের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, যা ইমাম বুখারী (রঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন।

তাতে এই কথা রয়েছে, যখন তুমি বিছানায় আশ্রয় নিবে তথা শয্যা গ্রহণ করবে, তখন তুমি আয়াতুল কুরসী তথা ….اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ পাঠ করো। কেননা তুমি যদি উহা পাঠ করো, তাহলে সারা রাত আল্লাহর পক্ষ হতে তোমার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত তোমার নিকট শয়তান আসতেই পারবেনা।

জিন ও ইনসানের মধ্য হতে প্রত্যেক বিদ্রোহী ও সীমালংঘনকারীকে শয়তান বলা হয়। شطن থেকে شيطان এর উৎপত্তি হয়েছে। شطَن অর্থ بعُد (দূর হয়েছে)। শয়তান আল্লাহর রহমত থেকে অনেক দূরে চলে গেছে বলেই তাকে শয়তান বলা হয়। অথবা شيطان এর উৎপত্তি হয়েছে شاط يشيط হতে। যখন কোনো জিনিষ খুব কঠিন ও শক্ত হয়, তখনই কেবল তাকে উদ্দেশ্য করে এ রকম কথা বলা হয়।

মহান আল্লাহ তাআলার পথে জীবন চালিয়ে জান্নাতে জাওয়ার তওফিক দান করুন (আমিন)৷

অনুবাদকঃ মাওলানা মুহাম্মদ খুরশিদুল ইসলাম | Source: Online


error: Content is protected !!