রোজা কি? রমজানে রোজা রাখার নিয়ম, রোজার বিধান ও ফজিলত


রোজা বা সাওম বা সিয়াম শব্দের অর্থ বিরত থাকা। তবে রোজা শব্দটিই প্রচলিত। শরিয়তের পরিভাষায়, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাওয়া, পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকাকে সাওম, সিয়াম বা রোজা বলে।

সুবহে সাদিক বলা হয়, রাতের শেষ দিকে পূর্ব দিগন্তের উভয় দিকে ক্ষীণ (দিগন্তের সাথে ভার্টিক্যালি) প্রশস্ত আকারে যে আলো প্রকাশ পায় তখন থেকে সাহরির সময় শেষ হয়ে যায় এবং এরপর থেকেই ফজরের সময় শুরু হয়।

 

রমজানে রোজা রাখার বিধান ও ফজিলতঃ

আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য অন্যতম বিশেষ নেয়ামত হলো রমজান মাস। এ মাসে মহাগ্রন্থ আল কুরআন হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে।

পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে,

“হে যারা ঈমান এনেছ তোমাদের ওপর রোযা ফরজ করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে করে তোমরা তাক্ওয়া অবলম্বন করতে পার”। (সূরা বাকারা: ১৮৩)

হযরত আদম যখন নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার পর তাওবাহ করেছিলেন তখন ৩০ দিন পর্যন্ত তার তাওবাহ কবুল হয়নি। ৩০ দিন পর তার তাওবাহ কবুল হয়। তারপর তার সন্তানদের উপরে ৩০টি রোযা ফরয করে দেয়া হয়।

আর সিয়াম সাধন করা প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির উপর ফরজ । তবে মুসাফির এবং অসুস্থ (এমন অসুস্থতা যা রোগ-কে আরো তীব্র করে কিংবা জীবন নাসের আশঙ্কা হয়) ব্যক্তির জন্য পরবর্তী কাজা আদায় করার সুযোগ দেয়া হয়েছে।

পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে,

সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর। (সুরা বাকারা ১৮৩-১৮৫)

রমজান মাসের রোজা রাখার জন্য অন্যতম শর্ত হলো মাস উপস্থিত হওয়া। আর রমজান মাসের সূচনার অন্যতম উপায় হলো চাঁদ উদিত হওয়া। রোজা রাখা এবং ঈদ পালন চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমনটাই নির্দেশ করেছেন।  

ইবনু আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা রমজানের পূর্বে রোযা রেখ না। তোমরা রমজানের চাঁদ দেখার পর রোজা রাখা আরম্ভ কর এবং চাঁদ দেখার পর তা ভাঙ্গ। মেঘের কারণে চাঁদ দেখা না গেলে তবে ত্রিশ দিন পূর্ণ কর। (জামে-তিরমিজি)

হাদিস শরিফে এসেছে,

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যখন রমজান মাসের প্রথম রাত আসে, তখন শয়তান ও অভিশপ্ত জিনদের শৃঙ্খলিত করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, তার একটি দরজাও খোলা হয় না। জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, এর একটি দরজাও বন্ধ হয় না এবং একজন ঘোষক ডেকে বলেন, হে সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তি, অগ্রসর হও। হে অসৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তি, থেমে যাও। আল্লাহ তায়ালা (রমজানের) প্রতিটি রাতে অসংখ্য বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি)

 

রোজার ফযিলত ও পুরষ্কারঃ

যেসকল আল্লাহভীরু মুত্তাকী ব্যক্তি এ মহান উৎসাহে উদগ্রীব হয়ে রমজানের রোজা রাখবেন এবং গুনাহ মুক্ত থেকে ইবাদতে মশগুল হবেন তাদের জীবনের সকল (সগিরা) গুনাহ ক্ষমা করা হবে। এ সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে,

আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াবের আশায় রমজান মাসের সিয়াম রাখলো, তার পূর্বের গুনাহ সমূহ মাফ করা হলো। (সুনানে ইবনে মাজাহ)

অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, সাহ্‌ল ইবনু সা’দ রা. থেকে বর্ণিত,

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন ‘রাইয়্যান’ নামে জান্নাতে একটি দরজা আছে। রোযা পালনকারীকে এই দরজা দিয়ে প্রবেশের জন্য ডাকা হবে। যে সব লোক রোজা পালন করবে তারা এই দরজা দিয়ে (জান্নাতে) প্রবেশ করবে। আর তাতে যে লোক প্রবেশ করবে সে আর কখনও পিপাসার্ত হবে না। (জামে-তিরমিজি)

শুধু তাই নয়, এ মাসে এমন একটি বিশেষ রজনি রয়েছে, যে রজনি হাজার মাসের চেয়েও অধিক উত্তম। এ রজনীকে লাইলাতুন কদর বলা হয়।এ রজনীটি রমজানের শেষ দশকের যে কোনো রাত্রি হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। আর এই বিশেষ নেয়ামত যেন ছুটে না যায় এজন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমজানে ইতিকাফের মাধ্যমে সর্বদা ইবাদতে মশগুল থাকতেন এবং সাহাবিদেরকেও উৎসাহ প্রদান করতেন। অনুরূপভাবে হাদিস শরিফে বর্ণিত রয়েছে।

আবূ হুরায়রাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রতি বছর (রমজানে) একবার কুরআন শরীফ পড়ে শুনানো হত। তাঁর মৃত্যুবরণের বছর কুরআন শুনানো হয়েছিল (দু’বার)। তিনি প্রতি বছর (রমজান মাসে) দশ দিন ইতিকাফ করতেন। কিন্তু ইন্তেকালের বছর তিনি ইতিকাফ করেছেন বিশ দিন। (সহিহ বুখারি, মিশকাতুল মাসাবিহ)

অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,  আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কদর রজনীকে  রমজান মাসের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতে অনুসন্ধান করো। ( সহিহ বুখারি)

 

রোজা রাখা সম্পর্কে বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞান কি বলে?

বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে রোজা রাখলে স্বাস্থ্যের ব্যাপক উন্নতি হয়। গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, কার্ডিওলজি এবং এন্ডোক্রিনোলজি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রমজান মাসে রোজা রাখা শারীরিক স্বাস্থ্যকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। রোজা রাখা মানবদেহের হজমের উন্নতি, বিপাক বৃদ্ধি এবং ওজন কমানোর জন্য উপকারী। এছাড়া রোজা শরীরকে ডিটক্সিফাই এবং পুনরুজ্জীবিত করে। যার ফলে মানব শরীর নতুন জীবনীশক্তি লাভ করে।

সুতরাং রমজান আল্লাহ তায়ালার দেয়া এ শ্রেষ্ঠ উপহারকে দুনিয়াবী সকল ব্যস্ততাকে উপেক্ষা করে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জনের লক্ষ্যে গুণাহ মুক্ত থেকে সিয়াম সাধনা ও ইবাদতে মশগুল হওয়া  প্রত্যেকের জন্য অপরিহার্য।

 

যেসব দিনে রোজা রাখতে মানা করা হয়েছেঃ

বছরের পাঁচ দিন ছাড়া বাকি দিনগুলোতে নফল রোজা রাখা যায়। দুই ঈদের দিন এবং কুরবানির পরের তিন দিন- এই পাঁচ দিন রোজা রাখা হারাম। মাহে রমজানের রোজা রাখা ফরজ। বাকি যেসব দিনে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে নফল রোজার গুরুত্ব ছিল এবং তিনি রোজা রাখতেন।

 

সোম ও বৃহস্পতিবারের রোজাঃ

নবীজি (স.) সোমবার আর বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন। এই দুই দিন রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (স.) বলেছেন, সোমবার ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর কাছে বান্দার আমল পেশ করা হয়। আর আমি পছন্দ করি, আমার আমল এমন সময় পেশ করা হোক, যখন আমি রোজাদার। (সুনানে তিরমিজি: ৭৪৭) সোমবারে রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে নবীজি বলেছেন, এই দিনে আমার জন্ম হয়েছে, এই দিনে আমাকে নবুয়ত দেওয়া হয়েছে। (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)

 

রান্নার বাংলা রেসিপি ভিজিট করুন www.FoodingBD.com | বিভিন্ন তথ্য পেতে ভিজিট  www.sehetu.com

Search Keywords:

চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোজার উপকারিতা, রোজা রাখার উপকারিতা ইসলাম, সাওমের উপকারিতা কি কি, রোজার বৈজ্ঞানিক উপকারিতা, সাওম পালনের ফলে ব্যক্তি জীবনে কি কি উন্নয়ন সাধন হয়, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে রোজা, রোজা কত প্রকার ও কি কি, মানবীয় গুণাবলী অর্জনে সাওমের গুরুত্ব কী, রমজানে কিভাবে রাখতে হয়, রোজার ইতিহাস, রোজা রাখা কি ফরজ, রমজানের রোজা কত হিজরীতে ফরজ হয়,

রোজা কাকে বলে, রোজা ভঙ্গের কারণ, রোজার গুরুত্ব, রমজানে রোজা রাখার নিয়ম, রোজা রাখা কি ফরজ, নফল রোজা রাখার নিয়ম, রোজার ফরজ কয়টি, রোজা সম্পর্কে আলোচনা, রোজার ফরজ কি কি, রোজার নিয়ত আরবি, রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া, রোজার নিয়ত কখন ও কীভাবে করতে হয়, রোজা রাখলে রোগ নিরাময় ও স্বাস্থ্যের উপকার, যেসব দিনে রোজা রাখতে মানা,

roja rakhar niyom bangla, Nofol rojar niyot, Roja Rakhar Niyot, kivabe roja rakhte hoy, seheri khaoar ses somoy kokhon, subhe sadik mane kon somoy, subhe sadek ki, roja rakhar upokarita, roja koto prokar o ki ki, roja vonger karon, romjan masher amol, ramjan masher fojilot, kon kon din roja rakha nished, roja rakhar niyom fojilot,


error: Content is protected !!