কুরআন হিফজ করার সহজ পদ্ধতি
বর্তমান যুগে কুফর ও কুফরের দোসরদের লম্ফঝম্প, আধিপত্য বিস্তার ও আগ্রাসী কুটকৌশল সত্ত্বেও ইসলাম তার গতিময়তা ফিরে পাচ্ছে, প্রসারিত হচ্ছে দিগ্বিদিক্ ইসলামের চেতনা ও আদর্শ। যার পশ্চাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে মুসলিম যুবকগণ। বিশেষ করে তাদের কুরআনের প্রতি আগ্রহ, কুরআন তিলাওয়াত করা ও কুরআন হিফজ করার বিষয়টি খুবই আশা ব্যঞ্জক। আল্লাহর কালামের প্রতি তাদের এ আকর্ষণের ফলে আমরা ব্যক্তিতে, সমাজে বরং সর্বত্র সুন্দর পরিবর্তনের আভাস পাচ্ছি। তারা কুরআন তিলাওয়াত করছে, কঠোর শ্রম দিয়ে কুরআন হিফজ করছে, বিশুদ্ধ উচ্চারণের জন্য মেহনত করছে, যা খুবই প্রসংশার যোগ্য। তবে এ ক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতির অনুশীলন ও তার নির্দেশনার অভাবে অনেক যুবক মাঝপথে হোচট খায়। তারা অনেক চেষ্টা করা সত্ত্বেও বিশুদ্ধ উচ্চারণ থেকে বঞ্চিত হয়। আরো বঞ্চিত হয় পূর্ণ কুরআন মুখস্থ ও তা আয়ত্তে রাখা থেকে।
আবার কারো কুরআন হিফজ থেকে বিরত থাকা, কারো হিফজ বন্ধ করে দেয়া, কারো আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও কুরআন হিফজ করার সাহস না করা ইত্যাদি কারণে আমার এ নিবন্ধের অবতারণা। আশা করি আমার এ প্রবন্ধ তাদের কুরআনের প্রতি মনোযোগী করে তুলবে এবং কুরআনের ব্যাপারে তাদের যত্নশীল হতে সাহায্য করবে, বিশেষ করে কুরআন হিফজ করার জন্য তাদের অন্তরে উৎসাহ যোগাবে। এ নিবন্ধ স্বার্থক, বাস্তবধর্মী ও ফলপ্রসূ করার জন্য বিভিন্ন জনের পরামর্শ নিয়েছি, এ ব্যাপারে যারা পারদর্শী ও পারঙ্গম তাদের সহায়তা গ্রহণ করেছি। অতঃপর প্রবন্ধটি আমি তিনটি পরিচ্ছদে সুবিন্যস্ত করেছি।
প্রথম পরিচ্ছদ : হিফজ আরম্ভ করার পূর্বে হিফজের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
১. ইখলাস অর্জন করা। অর্থাৎ হিফজের মাধ্যমে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা। বলে নেয়া ভাল, সালাত, সিয়াম, বায়তুল্লাহ শরিফের তওয়াফ ইত্যাদি নিরেট এবাদতগুলো কবুল হওয়ার জন্য ইখলাস ও আল্লাহর সন্তুষ্টি জরুরি। তদ্রুপ যেসব জিনিস আমাদের জৈবিক ও শারীরিক চাহিদা পূরণ করে, যেমন পানাহার, পরস্পর লেনদেন ও আচার-ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়কে এবাদতে পরিণত করার জন্য ইখলাস ও আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রয়োজন, বরং শর্ত। আমাদের আলোচ্য বিষয় তথা কুরআন তিলাওয়াত ও কুরআন হিফজ করা নিরেট এবাদতের অন্তর্ভুক্ত, যা ইখলাস ছাড়া আল্লাহর নিকট মূল্যহীন। আল্লাহ তাআলা বলেন, সুতরাং যে তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার রবের ইবাদাতে কাউকে শরিক না করে। [ কাহাফ : ১১]
হাদিসে কুদসিতে রয়েছে, শরিকদের মধ্যে আমি-ই অংশিদারি অংশের সবচেয়ে বেশি অমুখাপেক্ষী। যে আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করে কোন আমল করল, আমি তাকে এবং তার আমলকে প্রত্যাখ্যান করি। [ মুসলিম-হা.২৯৮৫] অতএব একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই হিফজ করা।
২. কুরআনের মহত্ত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা। এ বিষয়ে আমরা সামান্য আলোচনা করছি।
• কুরআন আল্লাহর কালাম এ অনুভূতি অন্তরে জাগরুক রাখা। আল্লাহ তাআলা বলেন: তাহলে তাকে আশ্রয় দাও, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনে। [তওবা : ৬] কুরআনের সম্মান মূলত আল্লাহর সম্মান। আল্লাহর সম্মানের উর্ধ্বে কোন সম্মান নেই, তাই আল্লাহর কালামের চেয়ে বেশি সম্মানিত কোন বস্তু নেই।
• কুরআন অবতীর্ন হওয়ার প্রেক্ষাপট নিয়ে চিন্তা করা। আল্লাহ তাআলা মানব জাতির দিকনির্দেশনা ও তাদের আলোকবর্তীকা স্বরূপ এ কুরআন নাজিল করেছেন। তিনি বলেন, এটি (আল্লাহর) কিতাব, এতে কোন সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য হিদায়াত। [বাকারা : ২] অন্যত্র ইরশাদ করেন, রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াত স্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। [বাকারা : ১৮৫]
• কুরআনের মর্যাদার বিষয়টি এ থেকেও স্পষ্ট হয় যে, কুরআনের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে অন্য জিনিসও সম্মানের পাত্র হয়ে যায়। যে মাসে এ কুরআন অবর্তীন হয়েছে সে মাস অন্য মাসের চেয়ে অধিক সম্মানের। যে রাতে এ কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে সে রাত অন্য রাতের তুলনায় অধিক সম্মানের। যে নবির ওপর এ কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে সে নবি অন্য নবির চেয়ে অধিক স্মানের। কুরআনের বদৌলতেই শেষ নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম অন্য সব নবি-রাসূল দের ইমাম ও গোটা আদম সন্তানের নেতা হিসেবে ভূষিত হয়েছেন। তিনি বলেন, আমি আদম সন্তানের সরদার, এতে কোন অহঙ্কার নেই। যে কুরআন শিক্ষা করবে ও অন্যদের শিক্ষা দিবে তার মর্যাদা অন্য সবার চেয়ে বেশি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন, তোমাদের মধ্যে সেই সর্বোত্তম যে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়। (বুখারি)
• আল্লাহ তাআলা কুরআনের প্রসংশা করে বলেন, আর আমি তো তোমাকে দিয়েছি পুনঃপুনঃ পঠিত সাতটি আয়াত ও মহান কুরআন। [হিজর : ৮৭]