ইসলামে আত্মীয়তার গুরুত্ব, সুফল ও সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি
ইসলামে রক্তের সম্পর্ক বজায় রাখা ও আত্মীয়তার বন্ধন (Family relation) অটুট রাখা মানুষের বুনিয়াদী আখলাকের অন্তর্ভূক্ত। এ পৃথিবীতে আমরা কোনো বিনিময়ের প্রত্যাশা ও ধারণা ছাড়া যে সকল নেক কাজ করি, সেগুলোর প্রতি গভীর দৃষ্টিতে তাকালে দেখা যায় যে, মানুষের সকলের মাঝেই আত্মীয়তার বাঁধন ও রক্তের সম্পর্কের একটি গভীর যোগসূত্র অটুট রয়েছে।
যে বা যার অন্তরে এ অনুপ্রেরণা ও অনুরাগের লেশমাত্র অবশিষ্ট নেই, তার তরফ হতে অন্যান্য লোকেরা নির্দয়তা, অত্যাচার, কঠোরতা, দুশমনী ও শত্রুতা ছাড়া কিছুই পাবে না, বরং সে এর চেয়েও বড় কিছু করতে মোটেও কুণ্ঠা বোধ করবে না।
এ জন্য ইসলামী জীবন ও জগতের ক্ষেত্রে রক্তের সম্পর্ক ও আত্মীয়তার একটি বিরাট ভূমিকা ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মানব সম্প্রদায়ের মাঝে উত্তম চরিত্রের সবচেয়ে বড় বিকাশ লক্ষ করা যায় পয়গম্বরগণের পবিত্র সত্ত্বার মাঝে। একই সাথে পয়গাম্বরগণের মাঝে সবচেয়ে উন্নত, সুউচ্চ ও সম্মানীত সত্তার অধিকারী হলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)। মহান আল্লাহপাক তাকে ক্ষমা, দয়া ও সহৃদয়তার যাবতীয় গুণাবলি দ্বারা ঐশ্চর্যমন্ডিত করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে: অবশ্যই তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য হতে একজন রাসূল প্রেরণ করা হয়েছে, যিনি খুবই বেদনাহত হন যদি তোমাদের ওপর বিপদ-আপদ পতিত হয় এবং তিনি মুমিন মুসলমানদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও দয়ার আবির্ভাব ঘটুক, তা জানতে ভালোবাসেন। তিনি ক্ষমাশীল দয়ালু। [সূরা তাওবাহ: রুকু ১৬]
পূর্ববর্তী পয়গাম্বরদের মধ্যে আল্লাহপাক হজরত ঈসা (আ.)-এর উম্মতদের একটি বিশেষ গুণের কথা তুলে ধরেছেন। সে গুণটি হলো আত্মীতা ও রক্তের সম্পর্ক বজায় রাখা, অক্ষুন্ন রাখা। এ প্রসঙ্গে আল কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘এবং সে সকল লোক তাদের অনুগত হয়ে গেল, আমি তাদের অন্তরে দয়া এবং অনুকম্পাকে ঢেলে দিলাম।’ [সূরা হাদিদ : রুকু ৪] তবে, এ গুণ গুলোর মাঝে উম্মতে মোহাম্মাদিয়া ও তাদের সাথে অংশীদার রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, যে লোক মোহাম্মাদ (সা.)-এর সাথে রয়েছে তারা কাফিরদের ওপর খুবই কঠোর ও শক্তিমান এবং তারা পরস্পর একে অন্যের প্রতি দয়ার্দ্রচিত্ত। [সূরা ফাতহ: রুকু ৪]
আপসেরর মাধ্যমে পরস্পর সম্পর্কিত লোকজনদের মাঝে একজনের সাথে অপর জনের যে নেক সম্পর্ক স্থাপিত হয়, তাকে সেলায়ে রেহেম বা রক্তের সম্পর্কের প্রতি যত্মবান বলা হয়। কেননা রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়তার সকল সম্পর্ক ও যোগসূত্র মাতৃ উদরে দয়ার দ্বারাই পয়দা হয়। এমনিভাবে রহীম, রহমান নাম দ্বয়ের উৎপত্তি ও ঘটেছে রহম নামক মূল ধাতু হতেই। এর দ্বারা এই পরিণাম ফল বেরিয়ে আসে যে, রক্তের সম্পর্কের অনুরাগ মূলত: রহমত সম্পন্ন আল্লাহপাকের রহমতেরই প্রতিবিম্ব। এর দ্বারাই দুনিয়া জোড়া সেলায়ে রেহমীর আবির্ভাব পরিলক্ষিত হয় এবং পৃথিবী ব্যাপী আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
হাদিস শরিফে এসেছে- রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রক্ত ও আত্মীয়তার সম্পর্ক আল্লাহপাকের ‘রহমান’ গুণ থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। [সহিহ বুখারি: কিতাবুল আদব]
মোট কথা, আত্মীয়দের ও পরিজনদের প্রতি দয়ার্দচিত্তের অনুরাগ ও অনুপ্রেরণার মূল উৎস স্বয়ং ‘রাহমান’ নামের প্রকৃত সত্তা আল্লাহ। দুনিয়া জোড়া সকল রহমদেলীর অনুপ্রেরণা এরই শাখা প্রশাখা মাত্র। সন্তানদের প্রতি ম্নেহ মায়ার ও ভালোবাসার উদ্রেক এ অনুপ্রেরণার সংস্পর্শ হতেই পয়দা হয়।
হজরত উসামা বিন যায়েদ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এক রানের ওপর আমাকে এবং অপর রানের ওপর ইমাম হাম্মাদকে (রা.) বসাতেন; তারপর উভয় রানকে একত্রিত করে বলতেন, হে আল্লাহ, তুমি এ দু’জনের প্রতি রহম করো, কেননা আমি এ দু’জনের ওপর রহম করি। [সহিহ বুখারি: কিতাবুল আদব]
দ্রুত গতিতে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য ডাউনলোড করুন ‘MaxThon” ব্রাউজার।